বিশ্বব্যাপী সকল মানুষ কেবল একটি প্রতিষ্ঠানের ক্রেতা নয়। বিষয়টি অনুধাবন করে মিতু তার মার্কেটের আকার নির্ধারণের চেষ্টা করে। মার্কেট যাচাইয়ের পর প্রয়োজনীয় মূলধন বিনিয়োগ করে মিতু তার ই- মার্কেটিং কার্যক্রম শুরু করে। শুধু তাই নয়, ই-মার্কেটিংয়ে প্রতিযোগী চিহ্নিত করা ও তাদের কৌশলসমূহ ধীরে ধীরে মিতু আয়ত্ত করার চেষ্টা করে। পণ্যের ভবিষ্যৎ চাহিদা নিরূপণ করে ই-মার্কেটিং কার্যক্রম পরিচালনা করায় আজ মিতু একজন সফল ই-কমার্স ব্যবসায়ী। এ উপ-অধ্যায়ে ই-মার্কেটের আকারসহ ভবিষ্যৎ চাহিদা নিরূপণ পদ্ধতি, মার্কেট প্রতিযোগী চিহ্নিতকরণ, মার্কেটে প্রবেশের প্রতিবন্ধকতা ও এর সাথে সম্পৃক্ত অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক প্রভাবকসমূহ সম্পর্কে আলোচনা করার চেষ্টা করবো।
ই-মার্কেট বলতে বিশ্বব্যাপী বর্তমান এবং সম্ভাব্য ই-ক্রেতাদেরকে বোঝায়। যারা ইলেকট্রনিক উপায়ে পণ্য সামগ্রী ক্রয় করছে বা ক্রয় করবে তাদেরকে নিয়েই ই-মার্কেট সৃষ্টি হয়। ই-মার্কেটিং বা ইলেকট্রনিক মার্কেটিং কোম্পানি ও ক্রেতাদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। কেননা, ই-মার্কেটিং কেনা-বেচাকে অত্যন্ত সহজতর করে তুলেছে।
২০১৯ সালে বিশ্বব্যাপী ই-কমার্স মার্কেটের আকার ছিল ইউএসডি (USD) ৯.০৯ ট্রিলিয়ন। অনেকেই মনে করছেন ২০২০ সাল থেকে ২০২৭ সালের মধ্যে এটি চক্রবৃদ্ধি হারে ১৪.৭% বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশ্বব্যাপী স্মার্টফোনের ব্যবহার এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, ই-কমার্স ব্যবসায়ের পরিধি দিন দিন বাড়তেই থাকবে।
প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে ই-মার্কেটের আকারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতোমধ্যে 4G এবং 5G সেবা চালু হয়েছে। এর ফলে ই-মার্কেট সাইজ বা আকারে অবশ্যই ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কোভিড-১৯ চলাকালীন সময়ে ই-কমার্স বিজনেস চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হলেও এর জনপ্রিয়তা অত্যধিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। কেননা, এ সময়ে পুরো বিশ্ব অনলাইন বিজনেসের ওপর নির্ভরশীল হয়ে ওঠে। যার ফলে ই-মার্কেটের আকার অত্যধিক হারে বৃদ্ধি পায়।
ই-কমার্স মার্কেট বৃদ্ধিতে যেসব কোম্পানিগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে তাদের মধ্যে Amazon.com. Inc, Apple. Inc, Alibaba, Walmart. Inc, EBay. Inc, Best Buy অন্যতম । ই-মার্কেট বৃদ্ধিতে যেসকল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখী হতে হয়েছে সেগুলো হলো—
• সাপ্লাইচেইন ব্যাহত হওয়া (Disrupted supply chain)
• লকডাউন এর কারণে সীমিত কার্যক্রম পরিচালনা (Limited operations due to the lockdown )
• সর্বোপরি কর্মচারীদের অভাব (Overall lack of employees)
• মজুত ব্যবস্থাপনাগত সমস্যা (Managing inventory problem)
• সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা (Maintaining social distance)
সাধারণত যেকোনো মানুষ তার আয় থেকে সঞ্চয় করে থাকে। এরূপ সঞ্চিত অর্থ যখন উৎপাদন বাড়ানোর কাজে ব্যবহৃত হয় তখন তাকে বিনিয়োগ বলে। উল্লেখ্য যে, বিনিয়োগের মাধ্যমে উৎপাদনের পরিমাণ বাড়ে। মনে করো, একটি কারখানায় একটি নির্দিষ্ট সময়ে ১০ লক্ষ টাকার মূলধন সামগ্রী আছে। উক্ত কারখানার উৎপাদন বাড়ানোর জন্য আরও ১ লক্ষ টাকার মূলধন সামগ্রী ক্রয় করা হলো। এখানে অতিরিক্ত ১ লক্ষ টাকাই হলো বিনিয়োগ।
প্রযুক্তির উন্নয়নে বর্তমানে ক্রেতারা খুব সহজে ই-কমার্সের বিভিন্ন সাইট থেকে তাদের পছন্দের পণ্যটি বাসায় বসেই ক্রয় করতে পারেন। বিশ্বব্যাপী অনলাইন ক্রেতাদের সংখ্যা (বাজার) বৃদ্ধি পাওয়ায় যে কেউ অনলাইন বিজনেসে বিনিয়োগ করতে পারে। অনলাইন ক্রেতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করা, তাদেরকে ধরে রাখা ইত্যাদি কার্যক্রমের জন্য বিনিয়োগ অত্যাবশ্যক। নিচে মার্কেটিং বিনিয়োগের ফলাফল রিটার্ন/পরিমাপ ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-
মার্কেটিং বিনিয়োগের ফলাফল (রিটার্ন) পরিমাপ ও ব্যবস্থাপনা (Measuring and Managing Return on Marketing Investment) : মার্কেটিং এর মূলনীতি হলো ক্রেতা সন্তুষ্টি করা। এক্ষেত্রে ক্রেতা সন্তুষ্ট থাকা মানেই হলো পণ্যের বিক্রয় বৃদ্ধি পাওয়া। আর পণ্যের বিক্রয় বৃদ্ধির ফলাফল হিসেবে কোম্পানির যা অর্জিত হয়, তা মুনাফা হিসেবে বিবেচিত। বর্তমান সময়ের বাজারজাতকারীরা তাদের অর্থ সুনির্দিষ্ট (Specific) মার্কেটিং খাতে বিনিয়োগ করতে চায়। অন্যথায় তাদের বিনিয়োগের ফলাফল তেমন ভালো কিছু বয়ে নিয়ে আসতে পারে না। পূর্বে অনেক বাজারজাতকারীই স্বাধীনভাবে প্রচুর পরিমাণে অর্থ ব্যয় করত এবং ব্যয়বহুল মার্কেটিং কার্যক্রম পরিচালনা করত। কিন্তু এরূপ বাজারজাতকরণ ব্যয়ের পরিপ্রেক্ষিতে কী পরিমাণ আর্থিক সুবিধা (Return) পাওয়া যাবে, তা বাজারজাতকারীরা চিন্তা-ভাবনাও করত না। তারা মনে করত যে, মার্কেটিং কার্যক্রম তাদের জন্য অদৃশ্যমান ( Invisible) ফলাফল বয়ে নিয়ে আসবে। যার ফলে তারা তাদের কার্যক্রমের ফলাফল যথাযথভাবে পরিমাপ ও মূল্যায়ন করতে পারত না।
বর্তমান অবস্থা এখন আর আগের মতো নয়। প্রত্যেক বাজারজাতকারীই তার বিনিয়োগের ভিত্তিতে অধিক পরিমাণে সুবিধা (Return) অর্জন করতে চায়। তাই তারা তাদের বিনিয়োগের টাকা ফেরত প্রাপ্তির (Return) বিষয়টি যথাযথভাবে পরিমাপ ও মূল্যায়ন করছে।
সাধারণ অর্থে, বাজারজাতকরণ বা মার্কেটিং বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত নিট ফেরতকে (Return) বিনিয়োগের ব্যয় দ্বারা ভাগ করলে যা পাওয়া যায়, তাকে বাজারজাতকরণ বিনিয়োগের ফেরত/ফলাফল বা রিটার্ন বলে। এ প্রসঙ্গে Philip Kotler এবং Gary Armstrong বলেন, "Return on marketing investment is the net return from a marketing investment divided by the cost of the marketing investment." (বাজারজাতকরণ বিনিয়োগ হতে নিট ফেরতকে বিনিয়োগের খরচ দিয়ে ভাগ করলে যা পাওয়া যায়, তাকে বাজারজাতকরণ বিনিয়োগের ফেরত বা রিটার্ন বলে)।
প্রকৃতপক্ষে, মার্কেটিং বিনিয়োগের ফলাফল/ফেরত পরিমাপ করা কোনো সহজ বিষয় নয়। তথাপিও বর্তমানে অসংখ্য কোম্পানি মার্কেটিং বিনিয়োগের ফলাফল পরিমাপের জন্য ক্রেতামুখী পদ্ধতি (Customer oriented method) ব্যবহার করছে। এরূপ পদ্ধতিতে ক্রেতা আকর্ষণ, তাদেরকে ধরে রাখা, উৎকৃষ্ট ভ্যালু এবং সন্তুষ্টি প্রদানের বিষয়গুলো বিবেচনা করা হয়। নিচের চিত্রে মার্কেটিং বিনিয়োগের ফলাফল/ফেরত পরিমাপের ক্রেতামুখী পদ্ধতিটি দেখানো হলো—
স্থানীয় বা দীর্ঘমেয়াদি সম্পদে মূলধন বিনিয়োগের সময় প্রকল্পের লাভজনকতা এবং বিনিয়োগের যোগ্যতা পরিমাপের জন্য যেসব কৌশল অবলম্বন করা হয়, তাই হচ্ছে প্রকল্প মূল্যায়ন পদ্ধতি বা মূলধন বাজেটিং কৌশল । যেসব কৌশল বা পদ্ধতি অবলম্বনের মাধ্যমে মুনাফা নির্ণয় করা হয়, তা নিচের ছকে উপস্থাপিত হলো-
বিনিয়োগের ভিত্তিতে সম্ভাব্য মুনাফা নির্ণয়ের প্রধান কৌশল দুইটি। যথা:
১. সনাতন কৌশল বা পদ্ধতি;
২. বাট্টাকৃত নগদ প্রবাহ কৌশল বা পদ্ধতি।
নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-
ক. সনাতন পদ্ধতি (Traditional method): এ পদ্ধতিকে অবাট্টাকৃত নগদ প্রবাহ পদ্ধতিও বলা হয় । সনাতন পদ্ধতিতে মূলধন বাজেটিং-এর ক্ষেত্রে নগদ প্রবাহ বিবেচনা করা হলেও অর্থের সময়মূল্যকে বিবেচনা করা হয় না। বেশিরভাগ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান এ পদ্ধতি দীর্ঘদিন ব্যবহার করে আসছে বলে একে সনাতন পদ্ধতি বলা হয়। এ কৌশলসমূহকে দুই ভাগে ভাগ করা হয় । যথা :
১. গড় উপার্জন হার (Average Rate of Return)
২. বিনিয়োগ পরিশোধ পদ্ধতি (Pay Back Period )
নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-
১. গড় উপার্জন হার (Average rate of return): সনাতন পদ্ধতির প্রথম কৌশল হলো গড় উপার্জন হার। বার্ষিক গড় নিট মুনাফাকে গড় বিনিযোগ দ্বারা ভাগ করে গড় উপার্জন হার পাওয়া যায়। এটি মূলধন ব্যয়ের তুলনায় বেশি হলে প্রকল্পটি গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।
২. বিনিয়োগ পরিশোধ পদ্ধতি (Pay back period): এটি সনাতন পদ্ধতির দ্বিতীয় কৌশল। বিনিয়োগ প্রস্তাব মূল্যায়নের জন্য বিনিয়োগ পরিশোধকাল পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। একটি প্রাচীনতম, জনপ্রিয় ও বহুল ব্যবহৃত একটি পদ্ধতি। এক্ষেত্রে অর্থের সময়মূল্য বিবেচনা করা হয় না।
খ. বাট্টাকৃত নগদ প্রবাহ পদ্ধতি (Discounting cash flow method): যে পদ্ধতিতে সম্ভাব্য সব নগদ প্রবাহ বাট্টা করে বর্তমান মূল্য নির্ণয় করা হয়, তাকে বাট্টাকৃত নগদ প্রবাহ পদ্ধতি বলে। এ কৌশলসমূহকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। যথা :
১। নিট বর্তমান মূল্য (Net Present Value );
২। আন্তঃআয় হার (Internal Rate of Return);
৩। মুনাফা অর্জন সূচক (Profit ability index ) । নিচে
এগুলো সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো—
১. নিট বর্তমান মূল্য (Net present value): বাট্টাকৃত নগদ প্রবাহ পদ্ধতির প্রথম কৌশল হলো নিট বর্তমান মূল্য। কোনো প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নগদ আন্তঃপ্রবাহগুলোকে যথাযথ মূলধন ব্যয় দ্বারা বাট্টাকরণের মাধ্যমে মোট বর্তমান মূল্য নির্ণয় করে, তা থেকে প্রারম্ভিক ব্যয় নগদ বহিঃপ্রবাহ বাদ দিলে যে মূল্য থাকে তাকে নিট বর্তমান মূল্য বলে। এ পদ্ধতিতে বিনিয়োগ প্রকল্প যাচাইকালে বাট্টার হার বিবেচনা করা হয়। তাই মূলধন বাজেটিং-এ ব্যবহৃত পদ্ধতিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি এটি বলে বিবেচিত হয়।
২. আন্তঃআয় হার পদ্ধতি (Internal rate of return) : বাট্টাকৃত নগদ প্রবাহের দ্বিতীয় কৌশল হলো আন্তঃআয় হার কৌশল । যে বাট্টার হার দিয়ে কোনো প্রকল্পের প্রত্যাশিত নগদ প্রবাহকে বাট্টাকৃত করলে নগদ প্রবাহসমূহের বর্তমান মূল্য প্রকল্পের প্রারম্ভিক বিনিয়োগের সমান হয়, ঐ হারকে আন্তঃআয় হার বা অভ্যন্তরীণ মুনাফার হার বলে।
৩. মুনাফা অর্জন সূচক পদ্ধতি (Profit ability index): এটি বাট্টাকৃত নগদ প্রবাহের তৃতীয় কৌশল। এতে প্রকল্পের নগদ আন্তঃপ্রবাহসমূহকে মূলধন ব্যয়ের হার দ্বারা বাট্টাকৃত করে বর্তমান মূল্যে রূপান্তরিত করে প্রারম্ভিক বিনিয়োগ দ্বারা ভাগ করা হয়। এর ফলে যে অনুপাত পাওয়া যায়, তাকে মুনাফা অর্জন সূচক বলে।
বিশ্বব্যাপী যারা অনলাইনে পণ্য বা সেবাসামগ্রী ক্রয় করছে অথবা ভবিষ্যতে কেনার আগ্রহ রয়েছে এরূপ দু'ধরনের ক্রেতাদের সমন্বয়ে ই-মার্কেট গঠিত। ই-মার্কেটের ভবিষ্যৎ চাহিদা নিরূপণ করা ততটা সহজ কাজ নয়। কতগুলো পদ্ধতি অবলম্বনের মাধ্যমে ই-মার্কেটের ভবিষ্যৎ চাহিদা নিরূপণ করা যেতে পারে, যেগুলো সম্পর্কে নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-
১. বাজারকে সংজ্ঞায়িতকরণ (Defining the market): এক্ষেত্রে মার্কেট বা ই-মার্কেট বলতে কী বোঝানো হয়েছে তা প্রথমেই যথাযথভাবে সংজ্ঞায়িত করতে হবে। বাজার বা মার্কেটকে সংজ্ঞায়িত করা না গেলে কোনোভাবেই মার্কেটের ভবিষ্যৎ চাহিদা নিরূপণ করা সম্ভব নয়।
২. লক্ষ্য চিহ্নিতকরণ (Identifying goals): ই-মার্কেটের ভবিষ্যৎ চাহিদা নিরূপণের প্রধান লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য কী তা এ ধাপে চিহ্নিত করতে হবে। কেননা, লক্ষ্য নির্ধারণ করা না হলে যথাযথভাবে কার্য সম্পাদন করা সম্ভব নয়। ই-মার্কেটের ভবিষ্যৎ চাহিদা নিরূপণের একাধিক লক্ষ্য থাকতে পারে। যেমন—আগামী সময়ের ক্রেতাদের জন্য তাদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য তৈরি করা, এটি একটি লক্ষ্য হতে পারে।
৩. ই-মার্কেট গবেষণা (E-market research): ই-মার্কেটের ভবিষ্যৎ চাহিদা নিরূপণের অত্যন্ত কার্যকর একটি পদ্ধতি হলো মার্কেট রিসার্চ করা। এজন্য যথাযথ ও পর্যাপ্ত তথ্যের প্রয়োজন। অসংখ্য অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক উপাদান এক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করতে পারে।
৪. তথ্য এবং উপাত্ত মূল্যায়ন (Evaluating information and data): বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও উপাত্তসমূহ বিশ্লেষণ ও মূল্যায়নের মাধ্যমে ই-মার্কেটের ভবিষ্যৎ চাহিদা সম্পর্কে ধারণা গ্রহণ করা যায় ।
৫. সার্চ-ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন টুলস এর ব্যবহার (Using search engine optimization tools ) : গুগল সার্চ ইঞ্জিনসহ অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিন এক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। গুগলে সার্চ করে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা যেতে পারে।
৬. সামাজিক মাধ্যমের ব্যবহার (Using social media): ই-মার্কেটের ভবিষ্যৎ চাহিদা নিরূপণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন- ফেসবুক, ইউটিউব ইত্যাদি।
যারা অনলাইনে সমজাতীয় পণ্যের বিজনেস করেন তারা একে অপরের প্রতিযোগী বা প্রতিদ্বন্দ্বী। বিশ্বব্যাপী অনলাইন মার্কেটিং-এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাওয়ায় এর প্রতিযোগী ব্যবসায়ীর সংখ্যাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিযোগীদের চিহ্নিত করা যেকোনো ব্যবসায়ীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কেননা, তাদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় কৌশল গ্রহণ করতে হয়। মার্কেটে প্রতিদ্বন্দ্বী চিহ্নিত করার পদ্ধতিসমূহ সংক্ষেপে নিচে আলোচনা করা হলো—
১. ই-মার্কেট সংজ্ঞায়িতকরণ (Defining e-market): প্রতিযোগী বা প্রতিদ্বন্দ্বী চিহ্নিতকরণে প্রথমেই মার্কেট বা ই-মার্কেটকে সংজ্ঞায়িতকরণ করতে হবে। অর্থাৎ, মার্কেট বলতে কী বোঝায় সে বিষয়ে ধারণা অর্জন করতে হবে।
২. মার্কেট গবেষণা (Market research): প্রতিযোগীদের চিহ্নিত করতে হলে অবশ্যই বাজার গবেষণা করতে হবে। এক্ষেত্রে বিক্রয়কর্মীদের নিকট থেকে তথ্য সংগ্রহ করেও প্রাথমিকভাবে মার্কেটের অবস্থান সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যেতে পারে।
৩. ক্রেতাদেরকে জিজ্ঞেস করে (Asking customers): সমজাতীয় পণ্য যারা ক্রয় করছে তাদের কাছ থেকেও কার্যকর তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিদ্বন্দ্বীদের চিহ্নিত করা সম্ভব।
৪. SWOT বিশ্লেষণ (SWOT analysis): সমজাতীয় পণ্য বা সেবা সরবরাহ করছে তাদের শক্তি, দুর্বলতা, সুযোগ ও হুমকিসমূহ বিশ্লেষণ করেও প্রতিযোগী চিহ্নিত করা যায়।
৫. প্রধান প্রতিযোগীদের শ্রেণিবদ্ধ করা (Categorizing main competitors) : অসংখ্য প্রতিযোগীদের থেকে প্রধান প্রতিযোগী কারা তা চিহ্নিত করতে হবে। যেমন- 7up এর প্রধান প্রতিযোগী হলো স্প্রাইট। প্রধান প্রতিযোগী চিহ্নিতকরণে যেসকল মিডিয়া ব্যবহার করা যেতে পারে তার মধ্যে নিচে উল্লিখিত মিডিয়াগুলো অত্যন্ত কার্যকর :
* প্রতিদ্বন্দ্বী চিহ্নিতকরণে গুগল এবং Amazon-এর সহযোগিতা নেওয়া।
* বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া তথা ফেসবুক, ইউটিউব ইত্যাদির সহযোগিতা নেওয়া ।
৬. সম্ভাব্য প্রতিযোগীদের তালিকা তৈরি (Creating possible list of competitors) : যেসকল ব্যবসায়ী আমাদের কাছাকাছি অবস্থান করছে তাদেরকে চিহ্নিত করা ও তাদের একটি চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করা। তারা কী পণ্য উৎপাদন করছে, কীভাবে মার্কেটিং করছে ইত্যাদি জানতে হবে।
৭. প্রতিদ্বন্দ্বীদের বাজার অবস্থান চিহ্নিতকরণ (Identifying the market position of competitors): মার্কেট প্রতিদ্বন্দ্বী চিহ্নিত করার আরকটি উপায় হলো প্রতিদ্বন্দ্বীদের বাজার অবস্থান সম্পর্কে জানা। অর্থাৎ, প্রতিযোগী কোম্পানি ও তাদের পণ্য সম্পর্কে ক্রেতারা কী ধারণা রাখেন সে সম্পর্কে অবগত হওয়া।
মার্কেটে প্রবেশের ক্ষেত্রে কতিপয় চ্যালেঞ্জ বা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়। নিচে এগুলো আলোচনা করা হলো :
১. ভোক্তারা সোশ্যাল নেটওয়ার্কের ওপর নির্ভরশীল (Coustomers rely on social networks): অনলাইন ক্রেতারা মূলত সোশ্যাল নেটওয়ার্কের ওপর নির্ভরশীল। ফেসবুক, গুগল, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার ইত্যাদির ওপর নির্ভরশীল। আর এসব মিডিয়াই হলো অনলাইন ক্রেতাদের যোগাযোগের একটি প্ল্যাটফর্ম।
২. সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক বাধা (Cultural and Social Barriers): একটি দেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সংস্কৃতি এবং সামাজিক শক্তি প্রধান বাধা। একটি দেশের জনগণের মূল্যবোধ, খাদ্য, পোশাক, ভাষা, ঘরবাড়ি ইত্যাদি হলো সংস্কৃতি। আর পরিবার, শিক্ষা, ধর্ম এবং আচার-ব্যবহার হলো একটি দেশের সামাজিক শক্তি। দু'টি দেশের সংস্কৃতি এবং সামাজিক শক্তি আলাদা হওয়ায় পণ্য বিক্রয়ে সমস্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে। একটি দেশে মদ অন্যতম পানীয়, কিন্তু অন্য দেশে মদ নিষিদ্ধ। যে দেশে মদ নিষিদ্ধ সেই দেশে মদ উৎপাদনকারী দেশ মদ বিক্রি করতে পারে না।
৩. রাজনৈতিক বাধা ( Political Barriers) : রাজনৈতিক পরিবেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অন্যতম বাধা। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং অস্থিতিশীলতার ওপর আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নির্ভরশীল। আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ঝুঁকিপূর্ণ। আবার, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে আমেরিকা এবং জাপানে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য অনুকূল ।
৪. আমদানি শুল্ক (Import Tariffs) : আমদানি দ্রব্যের ওপর আরোপিত শুল্ককে আমদানি শুল্ক বলে। দেশীয় শিল্পকে রক্ষার জন্য বৈদেশিক প্রতিযোগীর দেশের পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক আরোপ করা হয়। অতিরিক্ত আমদানি শুল্ক আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাধা। "Tariff is a tax imposed by a government on goods entering at its borders " শুষ্ক হলো সরকার কর্তৃক নির্ধারিত এক ধরনের কর। যখন একটি দেশের সীমান্ত অতিক্রম করে পণ্যের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালিত হয়, সেক্ষেত্রে রপ্তানি পণ্যের ওপর সরকার এ জাতীয় করের ব্যবস্থা গ্রহণ করে। সাধারণভাবে বলতে গেলে, দেশের সীমান্ত অতিক্রম করে দ্রব্যের চলাচলের ওপর কর ধার্য করাকে Tariff বা শুল্ক বলে।
৫. কোটা (Quota): একটা নির্দিষ্ট সময়ে আমদানি অথবা রপ্তানির পরিমাণ বা মূল্যের সীমা নির্ধারণ করাকে কোটা বলে। এ প্রসঙ্গে Philip Kotler and Gary Armstrong বলেছেন, "Quota is a limit on the amount of goods that an importing country will accept in certain product categories." অর্থাৎ, আমদানিকারক দেশ নির্দিষ্ট কোনো ক্যাটাগরির পণ্য যে পরিমাণ গ্রহণ করতে রাজি থাকে তার সীমা নির্ধারণ করে দেওয়াকে Quota (কোটা) বলে। সাধারণত বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় এবং দেশীয় শিল্প সংরক্ষণ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে কোটা পদ্ধতি আরোপ করা হয়ে থাকে। ১৯৩১ সালে ফ্রান্সে প্রথম কোটা প্রয়োগ করা হয়। বর্তমানে অনেক দেশেই এমন কোটা পদ্ধতির প্রচলন লক্ষ করা যায়।
৬. বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা ( Commercial embargo): আমদানি পণ্যের ওপর যখন সরকারি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়, তখন তাকে বাণিজ্যিক বা সরকারি নিষেধাজ্ঞা বলে। Philip Kotler এবং Gary Armstrong- এর মতে, "Embargo means a ban on the import of a certain product অর্থাৎ নিষেধাজ্ঞা হচ্ছে নির্দিষ্ট কোনো পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি ।
৭. বিনিময় নিয়ন্ত্রণ (Exchange Control): আমদানির মূল্য পরিশোধ করার জন্য বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় প্রয়োজন হয়। বৈদেশিক মুদ্রার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করাকে বিনিময় নিয়ন্ত্রণ বলে। বিনিময় নিয়ন্ত্রণ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে আরেকটি বাধা। মুদ্রা বিনিময়ের ক্ষেত্রে সরকারি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হলে এবং বিদেশি মুদ্রার ক্রয়-বিক্রয়ের পরিমাণ বা মূল্যের ওপর সরকারি বিধি-নিষেধ আরোপ করা হলে, তাকে বিনিময় নিয়ন্ত্রণ বলা হয়।
বাজার মূলত অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক কতিপয় উপাদান দ্বারা প্রভাবিত হয়। যেসব উপাদান দ্বারা বাজার প্রভাবিত হয় তাকেই বাজারের প্রভাবক বলে ।
বাজারের সাথে সম্পৃক্ত উপাদানসমূহ একটি দেশের অর্থনীতি, ইন্ডাস্ট্রি এবং কোম্পানির ওপর প্রভাব বিস্তার করে। তাই বলা হয়েছে “Market Influencers are the broad factors that affect the economy, industry, and companies as a whole,"
নিচে ই-মার্কেটের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক প্রভাবকসমূহ আলোচনা করা হলো-
১. সরকার (Goverment) : একটি দেশের সরকার ফ্রি মার্কেট বা মুক্ত বাজারের ওপর অনেক প্রভাব বিস্তার করে। অর্থাৎ সরকার এবং তাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো বিভিন্ন আর্থিক নীতিমালা তৈরি করে বাজারে প্রভাব বিস্তার করে। সরকার ট্যাক্স বাড়িয়ে বা কমিয়ে, সুদের হার পরিবর্তন করে এবং খোলা বাজারে ডলারের পরিমাণকে নিয়ন্ত্রণ করে বাজারকে প্রভাবিত করতে পারে।
২. আন্তর্জাতিক লেনদেন (International transaction : ই-মার্কেট মানেই দেশ ও দেশের বাহিরের লেনদেন। এক্ষেত্রে কতিপয় সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হয়। ফান্ড বা তহবিলের প্রবাহ যেকোনো দেশের অর্থনীতি এবং এর মুদ্রার শক্তিকে প্রভাবিত করে। একটি দেশ থেকে অন্য দেশে টাকা চলে যাওয়া (আন্তর্জাতিক লেনদেন) মানেই হলো সে দেশের অর্থনীতি ও মুদ্রা দুর্বল হয়ে পড়বে।
৩. চাহিদা এবং সরবরাহ (Demand and supply) : ই-মার্কেটের অন্যতম প্রভাবক হলো চাহিদা ও সরবরাহ। পণ্য, সেবা, মুদ্রা বা বিনিয়োগের চাহিদা ও সরবরাহকে গতিশীল করে। বাজারে পণ্যের চাহিদা কেমন, কী পরিমাণ সরবরাহ করতে হবে তা ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করে।
৪. রাজনৈতিক প্রভাব (Political influence): যেকোনো দেশের সরকারের পলিসি এবং সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক উপাদান বা প্রভাবক হিসেবে বিবেচিত। ই-মার্কেটের ক্ষেত্রে সব দেশের রাজনৈতিক প্রভাব একরকম নয়। কোনো কোনো দেশের সরকার এত চমৎকার পলিসি করেছে যে, ক্রেতারা যেন স্বাচ্ছন্দ্যে কোনো ধরনের ঝুঁকি ছাড়াই পণ্য ক্রয় করতে পারে। আমাদের দেশের সরকার এ বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করছে।
৫. অর্থনৈতিক প্রভাবক (Economic influence) : ই-মার্কেটের লেনদেনের ক্ষেত্রে সরকার এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাচিত নিয়ম-কানুন যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হয়। এর মধ্যে সুদের হার, মুদ্রাস্ফীতি, জিডিপি প্রবৃদ্ধি, অর্থনেতিক কার্যকলাপ, লেনদেনের ভারসাম্য ইত্যাদি অন্যতম।
৬. সামাজিক প্রভাবক (Social influence) : বিশ্বের সব দেশের সামাজিক অবস্থা একরকম নয়। সে হিসেবে ই-মার্কেটের ধরনও একরকম নয়। সকল মানুষ বা ক্রেতার জীবন-ধাঁচ, ক্রয় ক্ষমতা, প্রযুক্তিগত জ্ঞান একরকম নয়। তাই ই-মার্কেটে সামাজিক প্রভাব লক্ষ করা যায়।
৭. প্রযুক্তিগত প্রভাব (Technological influence) : ই-মার্কেটের ক্ষেত্রে একটি কোম্পানির প্রযুক্তিগত ক্ষমতা ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করে। গবেষণা কার্যক্রম এবং উন্নয়নের অগ্রগতি প্রযুক্তির ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল।
৮. পরিবেশগত প্রভাবক (Environmental influence ) : ই-মার্কেটের অন্যতম প্রভাবক হলো পরিবেশগত উপাদান। বিশ্বের সব দেশের জলবায়ু, আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক সম্পদ একরকম নয়। পরিবেশগত এসব উপাদানগুলো ই-মার্কেটে প্রভাব বিস্তার করে।
Read more